আবারও একটি নতুন রগরগে যাত্রাপালা নিয়ে হাজির শিবপ্রসাদ নন্দিতা জুটি। মুখ্য ভূমিকায় পনের বছর আগের ভুলে যাওয়া জুটি প্রসেঞ্জিত-ঋতুপর্ণার চমক।
আসুন আসুন দেখে যান আবার আমরা একসাথে নিয়ে এসেছি প্রসেঞ্জিত ঋতুপর্ণাকে পনের বছর পর – এটাই হল ছবি সফল করার মূল ডায়লগ। এতে আর এমন কি, এক খানা ক্যামেরা খাড়া করে মদনদাও এরকম সিনেমা বানাতে পারত। বুম্বাদা একটু হাসো, একটু হাঁটো, একটু নাচো। ঋতুদি একটু কাঁদো, একটু ভাবো, একটু খোলো। ব্যস হয়ে গেল সিনেমা। পোস্টারে লিখে দেব ‘আবার পনের বছর হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয়’। সিনেমা হিট। পরের বার প্রসেঞ্জিত দেবশ্রীকে নিয়ে আনব। পোস্টারে লিখব চুমকি আর বুম্বা একসাথে আবার। পুণরায় হিট। এরকম ভাবে একে একে মোটামুটি দশবছর মুখ দেখা দেখি বন্ধ জুটিকে এক এক করে আনব আর গাধা পাবলিককে হেব্বী গ্যাস খাইয়ে হলে এনে প্রোডিউসারকে মাল্লু কামিয়ে বাংলা সিনেমার বারোটা বাজাবো। এবং অবশ্যই যেখানে সুযোগ পাবো একখানা রবীন্দ্রনাথ গুঁজে দিয়ে আঁতলামোর চুড়ান্ত ভেরেন্ডা ভাজবো।
কি হবে এই সিনেমায়। আমি বলে দিচ্ছি। কলেজের হেব্বী প্রেম। হোস্টেল লাইফ। মাঝে মাঝে সকলে মিলে আউটিং। সকলের হাতে DSLR, সকলেই ফটোগ্রাফার। শুঁয়ে বসে পেছন খানা উচ্চে তুলে ঘাসের ছবি বাসের ছবি। ছবি তুলতে তুলতে মেয়েও তুলি। দলে একটাই হিরো একটাই হিরোইন। দলের বাকিরা ?? তাদের নিজেদের কোনো সমস্যা নেই। শুধু হিরো হিরোইন-কেই নিজের কাঁধে মাথা রেখে শুধুই সাপোর্ট। যাই হোক, অবশেষে প্রেম, বিছানায় চুকচুক, বাথরুমে স্নান, অনুপমের হেঁয়ালী শব্দের আধুনিক গান। ‘তোমার নৌকোর মুখোমুখি, আমার সৈন্যদল’ জিও। কি লিখেছ দাদা !! জবাব নেই জবাব নেই। সত্যি জবাব নেই। দু-একজনকে এইসব হেঁয়ালীর মানে জিজ্ঞেস করে দেখুন, কেউ কিছুই জবাব দিতে পারবে না।
যাই হোক, আমি কাহিনীতে ব্যাক করি। কাহিনী ?? হ্যাঁ সে এক বিশাল কাহিনী। প্রেম হল, সেক্স হল, নন্দন নলবন এক্সিবিশন সব হল। শেষ মেষ কাটাকাটি। বুঝলেন দাদা, দুজনেই কিন্তু একে অপরকে হেব্বী প্রেম করত। দাদা বউদি কারো দোষ নেই, কিন্তু কি করে যে কাটাকাটি হয়ে গেল কেউ বুঝতে পারল না। যা কল্লা। মোদী মমতা নাকি !!! হয় প্রেম ছিল, নয় ছিল না। ছাড়াছাড়ি হয়েছে মানে প্রেম ছিল না। সিম্পল। লাভ থাকলে ছাড়াছাড়ি হত না। ছাড়াছাড়ি হল। দুজনের দু’জায়গায় বিয়ে হল (নাও হতে পারে, ওয়াইল্ড গেস করছি)। ঋতুপর্ণার বর হেব্বী জানোয়ার। উঠতে বসতে খোঁটা দেয়, স্বাধীনতায় শিকল দেয়। যেন তুমি ধোঁয়া তুলসী ?? বরের ছবি দেওয়ালে ঝুলিয়ে পার্সে পুরোনো সঙ্গীতে তান দিচ্ছ সেই বেলা তুমি প্রেমী আর তোমার বর প্রেম চোপড়া !! বাহরে ফেমিনিজম। শেষ মেষ ডিভোর্স। কোলের মেয়ে ঘাড়ে তুলে একা নারী স্বাধীন নারী - আদর্শ নারী। একা থাকি একা খাই, যেদিক খুশি উড়ে যাই। তা ভালো।
পুরুষটির কি হয় ?? পুরুষটি হেব্বী বউ পায়। এক্কেবারে ছোটবউ সিনেমার বড় বউয়ের মত। হেব্বী প্রেম, জ্বলন্ত স্যাক্রিফাইস। ব্যাস। নারী মানে এই দুই ব্রাকেটে বন্দী। হয় ফেমিনিজমের বিপ্লবে সংসার ছাড়া নয় সংস্কারী ত্যাগী। দুটো একসাথে কখনই নয় অথবা কোনোটাই নয়। এর বাইরে গেলেই কোনো মন্ত্রীর দেগে দেওয়া ‘বেহাঁয়া’। যাই হোক, যাত্রাপালায় এর থেকে বেশী আশা না করাই ভালো। আগের সিনেমায় (বেলাশেষে) স্বাতীলেখা বলছে, তার স্বামী যে কিনা অন্য একটা মেয়ের চক্করে ডিভোর্স অবধি পৌঁছে গেছিল তার পেচ্ছাপ পরিস্কার করা এবং সেই গন্ধটাই নাকি তার সুখ তার প্রেম। শালা চুড়ান্ত হিপোক্রিট। উল্টোটা হলে কি হত ?? স্বাতীলেখা যদি অন্য ছেলের হাত ধরে দুদিন দীঘা বেরিয়ে ফিরে আসত ??? বাঙ্গালী কিন্তু সেই সিনেমা হেব্বী গিলেছিল। ড্যাস গিলেছিল, আনন্দবাজারে তিনদিন টাকা দিয়ে কেনা রিভিউতে কিচ্ছু প্রমাণ হয় না।
না, অন্যদিকে যাব না ?? প্রাক্তনে মনোনিবেশ করি। তা এরপর কি হল ? রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা। পুরোনো ভালোবাসা চাগাড় দিয়ে উঠল ?? তোমার মাথা। যেটা উঠল সেটা অন্যকিছু। বাংলা ভাষায় বলে সেক্স। ঘাড়ের কাছে একটু সুড়সুড়ি, নাভিতে আলতো ছোঁয়া। হা রে ‘প্রেম’ বলে তুমি টু-এয়ার কোচে ঝিঙ্কু একখানা চুমু খেয়ে নিলে। আর তোমার বউ ?? তার সাথে তবে এতক্ষণ কি করছিলে ??
সারা সিনেমা ট্রেনেই কাটবে। মাঝে মাঝে ফ্লাশব্যাকে আর ড্রোনে ভর করে কলকাতা দর্শন। আহারে কি প্রেম !!! কেন হল ছাড়াছাড়ি ?? কি জানি !! এমনি এমনি !!! আসলে ইগো। ওটাই আসল। নিজের বউ বা প্রেমিকাকে নিয়ে সিনেমায় যাবেন। আপনার নারী বা আপনার পুরুষ আপনার জামায় হাত ঢুকিয়ে মনে মনে তার আগের জনকে র্যালিশ করবে। চোখের কোণায় জল এলে বুঝে নেবেন ওটা আপনার জন্যে নয়, ক্লাস নাইনে সেকশন বি-তে রোল নম্বর ১৭-র বুঁচকির জন্যে।
ট্রেন লাস্ট স্টেশানে এলে কি হবে ?? দুজনেই একে অপরকে হেব্বী ফাটাফাটি জ্ঞান দিয়ে (ফোন নম্বর এক্সচেঞ্জ হয়ে গেছে, মাঝে মাঝে হাওয়া বদল করতে দুজনেই যাবে, সেটা সিনেমায় দেখানো হবে না যদিও) যে যার গুহায় ফিরে আসবে। ওফ !! কি স্যাক্রিফাইস, কে আছিস ওকে আরো দুটো হাততালি বেশী দে।
ট্রেন লাস্ট স্টেশানে এলে কি হবে ?? দুজনেই একে অপরকে হেব্বী ফাটাফাটি জ্ঞান দিয়ে (ফোন নম্বর এক্সচেঞ্জ হয়ে গেছে, মাঝে মাঝে হাওয়া বদল করতে দুজনেই যাবে, সেটা সিনেমায় দেখানো হবে না যদিও) যে যার গুহায় ফিরে আসবে। ওফ !! কি স্যাক্রিফাইস, কে আছিস ওকে আরো দুটো হাততালি বেশী দে।
এক হাতে ব্যাগ, অন্য হাতে বউ, চোখে জল আর মনে ‘এই শনিবার পার্টি হবে পার্টি হবে’ নাচ নাচতে নাচতে বুম্বাদা খুশি পিসিকে নিয়ে দূরে মিলিয়ে যাবে। একটা শান্তিনিকেতনের সুর্যাস্তের ছবি দিয়ে সিনেমা শেষ হবে। চোখের জলে ভেজা ন্যাপকিন নিয়ে হলের বাইরে বেরিয়ে সকল পাবলিক এগরোল খাবে। আনন্দবাজারে হেডিং হবে – পনের বছর পর আবার সেই বুম্বা-ঋতু রসায়ন। কাহিনীর দাড়ি কমায় শুধুই ফিজিক্স। প্রেম নয় আসলে সকলই বাৎসায়ন। আসুন এর চে ভালো ‘হাউসফুল ৩’ দেখি।
No comments
Post a Comment