Header Ads

ad728
  • Breaking News

    তুম নেহি হো মেরে ফ্যান - ফ্যান রিভিউ (প্রবীর কুন্ডু)

    সুপারস্টার আরিয়ান খান্না আর তার সুপারফ্যান গৌরব – এই দুজনের মধ্যেকার শত্রুতা নিয়েই শাহরুখের নতুন সিনেমা ফ্যান। ফ্যান কেমন লাগল দাদা? ‘ওফ ফাটাফাটি’ , ‘সেই কবে লাস্ট দেখেছিলাম শাহরুখকে এই রকম অভিনয় করতে তারপর আজ আবার এই’ , ‘তাক লাগিয়ে দিল মাইরি’ , ‘সেই ডর, বাজিগরের কথা মনে করিয়ে দিল’ ইত্যাদি নানা রকমের স্টাটাসে ভরে যাচ্ছে সোসাল মিডিয়ার দেওয়াল। 

    এই আই-পি-এল-এর ভরা মরশুমেও যে ফার্স্ট শো কালেকশান প্রচুর হবে সে নিয়ে সন্দেহ নেই। প্রচুর গ্যাস খাওয়া পাবলিককে দেখলাম ‘ইন্টারভেল’ লিখেও পোস্ট করেছে। যাই হোক, সিনেমাটা কেমন সেটাই লিখতে বসেছি। নেগেটিভ লেখার মধ্যে একটা তুরীয় আনন্দ আছে। মানে যা কিছু হচ্ছে আসলে কিছুই হচ্ছে না, দুনিয়ার সব কিছুই বাজে এইসব লিখে একটা হেব্বী মজা পাওয়া যায়। যেহেতু ‘খারাপ’ লিখলে কেউ এসে আমার কান ধরে টানবে না বরং উলটে একটু বিপ্লবী বিপ্লবী ভাব দেখানো যাবে তাই এই গরমে খালি গায়ে গামছা কাঁধে সেই ফিলিংটি আমি হাতছাড়া করতে রাজী নই এবং সে কারণেই খারাপ বলছি এরকমটা ভাববেন না। সত্যি কথা ‘ফ্যান’ আর পাঁচটা চলতি সিনেমার থেকে কোনো ভাবেই আলাদা কিছু নয়। এক্কেবারে অ্যাভারেজ। যারা ডর বা বাজিগরের সাথে তুলনা করছেন তাদের এটা আসলে তাৎক্ষনিক প্রতিবর্ত ক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। দুইদিন গেলেই ভুলটা ভাঙবে। 

    সিনেমার মোক্ষম প্রশ্নটা ছিল আরিয়ান খান্না কি আসলে সত্যি শাহরুখ খান ?? স্বভাবতই না। কারণ তাই যদি হত তাহলে আরিয়ান খান্নার নাম শাহরুখ খানই রাখা যেতে পারত। তাহলে যেহেতু আরিয়ান খান্না শাহরুখ খান নয়, তাহলে কেন আরিয়ান খান্না সারা সিনেমা জুড়ে শাহরুখ খান হওয়ার অ্যাক্টিং করে গেল?? মানে সিনেমার বাইরে বিভিন্ন টিভি ইন্টারভিউতে, পাবলিক প্লেসে শাহরুখ খান যেরকমটা করে থাকেন আরিয়ান খান্না আলাদা কিছু করেন নি। প্রতিবারই দেখে মনে হচ্ছিল এটা তো শাহরুখ খানই। এমনকি এখানে আরিয়ান খান্নার বউকেও দেখে আমার গৌরী খান এবং সিনেমায় আরিয়ান খান্নার ছেলেমেয়েকেও দু ঝলক দেখে রিয়েল লাইফ থেকে আলাদা কিছু লাগে নি। আরিয়ান খান্নার প্রোফাইল দেখাতে গিয়েও শাহরুখের বিভিন্ন সিনেমার ক্লিপিং এবং তার অ্যাওয়ার্ড ফাংশানের অরিজিনাল ফুটেজ দেখানো হয়েছে। অন্তত আমি এটাই মেনে নিয়েছি আরিয়ান খান্না আসলে শাহরুখ খানই। কারণ সিনেমার শেষে আরিয়ান গৌরবকে যে ডায়লগটা দেয় সেটা শাহরুখের ডায়লগ। স্ক্রীপ্ট না থাকলেও শাহরুখ ওটাই বলত। আমার মনে হয় অনেকেই ভেবেছিলেন সিনেমাটা হয়ত ২০০০ সালের আশেপাশের সময়ের গল্প। কিন্তু সেটা নয়, একবারে এই ২০১৬ সালের সিনেমা। শাহরুখের ৪৮ তম জন্মদিনের গল্প। উল্লেখ্য শাহরুখের সাথে ফারহা খানের হাজবেন্ডের মারামারির ঘটনাকেও এখানে খুব বুদ্ধির সাথে তুলে ধরা হয়েছে যদিও সেটা স্পষ্ট ভাবে নয়। 

    আগে ছোট্ট করে গল্পটা রিভাইস করে নিই। দিল্লির ছেলে গৌরব। আরিয়ায়ন খানের অন্ধ ভক্ত। মেলার অ্যাকটিং প্রতিযোগীতায় প্রথম পুরস্কার পায়। সেই ট্রফি তার ভগবান আরিয়ান খান্নাকে দেখাতে সে মুম্বই পাড়ি দেয়। ২০ হাজার টাকার প্রাইজমানি নিয়েই সে মুম্বই যায়। যেহেতু শাহরুখ নিজেও প্রথমবার বিনা টিকিটে মুম্বই গিয়েছিল তাই গৌরব নিজেও পয়সা থাকা স্বত্তেও বিনা টিকিটে মুম্বই যায়। ধীরে ধীরে নানা ঘটনায় বোঝা যায় গৌরব আসলে সাইকো। সাইকো বললে অবশ্য অনেকে আপত্তি তুলতে পারেন কারণ এখানে তাকে সাইকো হিসেবে দেখানো হয় নি, এখানে তাকে একজন 'পাগলের মত ভক্ত ' রূপেই আঁকা হয়েছে। মন্নতের গেট থেকে নিরাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়। সেই সময় টিভিতে নিউজ দেখে গৌরব জানতে পারে উঠতি এক নায়কের সাথে আরিয়ান খান্নার ঝামেলা হয়েছে। তখন আরিয়ান খান্নার সাথে দেখা করার চোরা পথ খুঁজে পায় সে। গৌরব তখন সেই উঠতি নায়ককে ভয় দেখায় এবং আরিয়ান খান্নার কাছে ক্ষমা চাইতে বলে। ভিডিও রেকর্ডিং করে ছড়িয়ে দেয় ইন্টারনেটে। 

    আসল আরিয়ান খান্নার কাছে মেসেজ যায় যে এটা আসলে তার এক ভক্তের কীর্তি। আরিয়ান খান্না এই আচরণে মোটেই খুশী হয় না। নিজের ভক্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় এবং খুব ভদ্র ভাবে বোঝায় যে এটা ভালোবাসা নয়, এটা ক্রাইম। তুমি তোমার মত থাকো আমাকে আমার মত থাকতে দাও। বেসিকেলি গৌরব যাকে ভগবান ভেবে এসেছিল বা যেরূপ দেখার আশা নিয়ে এসেছিল সেই আশাতে ব্যাঘাত ঘটে। দুজনের মধ্যে খানিক ইগোর লড়াই হয় এবং শাহরুখ সরি আরিয়ান খান্না কিছুটা উদ্ধত দেখিয়ে ফেলে। যদিও আমার এখানে মনে হয়েছে নিজের ছোট ভাইকে বড় ভাই যেভাবে বকাঝকা করে তার থেকে এক ইঞ্চিও বেশী খারাপ ব্যবহার করে নি আরিয়ান খান্না। অপরাধ করলে সেটা কখনওই প্রশ্রয়যোগ্য নয়। এবং এই খানেই গ্যাঁড়াকলটা ঘটে যায়। অর্থাৎ যেখানে আমার গৌরবের প্রতি সহানুভুতি আসার কথা যেমনটা ডরের শাহরুখ বা বাজিগরের শাহরুখের প্রতি এসেছিল এখানে গৌরবের প্রতি সেই সহানুভুতির কণামাত্র আসেনা। কারণ নিজের সুপারস্টারের উপর তার ফ্যানের রাগটাকে লজিকালি দাঁড় করানো যায় নি। ফলে বদলা নেওয়ার যে স্পৃহা ফ্যান গৌরবের মধ্যে দেখা যায় সেটা তখন অ্যান্টি হিরোর গন্ডী পেরিয়ে ভিলেনের পর্যায়ে চলে যায়ে। এবং ধীরে ধীরে গৌরবের থেকে সমস্ত মায়া মমতা সরে গিয়ে পড়ে সুপারস্টার আরিয়ান খান্নার উপর কারণ এই লোকটা খুবই ভালো এবং কোনো কিছুর জন্যে দায়ী নয়। অহেতুক একটা পাগল ছেলে এই ভদ্রলোককে ডিস্টার্ব করছে।

    যাই হোক, কাহিনীতে ব্যাক করি। নিরাশ হয়ে গৌরব দিল্লি ফিরে আসে, নিজের সাইবার ক্যাফে বিক্রি করে সেই টাকা না জানি কোথায় লাগায় যেটা এক বছর পর এতটাই হয়ে যায় যে সে অনায়াসে আমেরিকা লন্ডন করে বেরায়। না জানি কি করে সে সমস্ত সিকিউরিটিকে বুদ্ধু বানিয়ে দেয়। রাস্তার সাধারণ জনগণ তাকে দেখে আরিয়ান খান্না ভেবে ভুল করে না কিন্তু সে যখন আরিয়ান খান্না হয়ে কোনো ক্রাইম করে তখন সকলেই তাকে আরিয়ান খান্না ভেবে ফেলে। একটা চেজিং সিন আছে। ইচ্ছে করেই রাখা, বোধহয় ডর থেকে অনুপ্রাণিত। তবে ডরের সেই চেজিং কখনওই বাস্তবের সীমা ছাড়ায় নি। এখানে সুপারস্টার শাহরুখ যখন লন্ডনের রাস্তায় বাইক টাইক নিয়ে এক বিল্ডিং থেকে আরেক বিল্ডিং-এ ঝাঁপ টাপ দেয় তখন মনে মনে খিস্তি ছাড়া আর কিছুই বেরোয় না। বিশেষ করে দড়ি নিয়ে যে স্টান্টটা আরিয়ান খান্না দেখায় সেটা দেখার পর আমার এক সেকেন্ডের জন্যে মনে হয়েছিল, এবার কম্পিউটারটা শাট ডাউন করে ঘুমিয়ে পড়ি। (এই রে !! হ্যাঁ আপনারা সঠিক বুঝেছেন, আমার ফ্যান রিলিজ করেছিল টরেন্টে এবং স্ক্রিনিং হয়েছিল আমার ডেস্কটপে, টিকিট পাওয়া নিয়ে কোনো ঝামেলা হয় নি ;) 

    সিনেমা এখানে শেষ হয় না। আরিয়ান খান্না কিছুতেই সরি বলবে না। আর বলবেই বা কেন ?? এটা কোনো ইগোর লড়াই নয় বা তোমার ফ্যানকে তুমি ভালোবাসো না টাইপ মেলোড্রামাও এই সময়ে দাঁড়িয়ে খাঁটে না। তুমি ভাই তুমি, আমি ভাই আমি। আমরা দুজনেই এই পৃথিবীতে যে যারটা করে খাচ্ছি। তোমাকে আমি সরি কেন বলতে যাব যখন আমি কিছুই করিনি। তোমার ক্রাইমের জন্যে তোমার সাত বছরের জেল হতে পারত সেখানে আমি নিজে পুলিশকে টাকা খাইয়ে তোমায় ভালোয় ভালোয় বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছি। তোমাকে হাত ধরে বুঝিয়েছি এগুলো ভালোবাসা নয় এগুলো ক্রাইম। কোথায় তুমি আমাকে আরো শ্রদ্ধা করবে তা নয়, এক বছর পর তুমিই আমার পেছন মারতে চলে এলে। আবার আবদার করছ, সরি বলতে হবে। তুমি সাইকো হতে পারো, আমি নই। 

    শেষটা একেবারেই প্রেডিক্টেবল। নতুন কিচ্ছু নয়। ডরে যা হয়েছিল বাজিগরে যা হয়েছিল একদম সেই রকম। তার আগে অবশ্য আরিয়ান খান্নাকে একটু ডায়লগবাজি করতে হয়েছিল। পরিচালক আসলে দ্বিধায় ভুগছিলেন তিনি না পারছিলেন আরিয়ান খান্নাকে খারাপ দেখাতে আবার চাইছিলেন সকলে যেন গৌরবের প্রতি সদয় হয়। কিন্তু এটা ভুলে গেলে কি করে চলবে যে গৌরবকে সিমপ্যাথি দেওয়াতে হলে আরিয়ান খান্নাকে মদন চোপড়া হতে হয়। 

    আমি যে পপুলার সিনেমা বা ঝাড়পিটের সিনেমাতেও লজিক খুঁজি এরকমটা নয়। ইদানিং কালের দেখা তেবর বা রাউডি রাঠোর আমার দারূন লেগেছিল আমি দু-তিনবার করে দেখছি। কিন্তু সেখানে পরিচালক তার গল্পতে পরিস্কার ছিল। তিনি একটি ভিলেন দেখিয়েছিলেন এবং একজন নায়ক দেখিয়েছিলেন যেখানে নায়ক ভিলেনকে মারছে। শালা যেভাবেই মারছে মনে হচ্ছে আরো মার শালাকে। কিন্তু এখানে দুজনকেই কাউকে গোটাটা খারাপ দেখানো যায় নি। অনেকে বলবেন বাস্তবে কেউ গোটা খারাপ বা গোটা ভালো হয় না। ঠিকই বলছেন তাহলে আমি বুঝলাম যে আপনি বাস্তবকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। কিন্তু তার পরের সিনেই দেখছি সিনেমার নায়ক আরিয়ান খান্না স্যুট বুট পরে সাততলা বাড়ির কার্ণিশে দাঁড়িয়ে দড়ি ধরে ঝুলে পড়ল সেটাও তো মানতে পারছি না। হয় সিনেমায় লজিক রাখুন নয়ত না রাখুন। কিছু জায়গায় বাস্তবে তো এরকমটা হয় তাই এইরকমটা দেখালাম, আবার কিছু জায়গায় সেটা বেমালুম ভুলে গেলুম করলে কি করে চলব দাদা। 

    ক্যামেরা ওয়ার্ক ভালো, এডিটিং ভালো,  জবরা ফ্যান গানটা সিনেমায় থাকলে ভালই লাগত। কিন্তু সিনেমায় গান নাই এবং গানের থেকেও বহুত বোকা বোকা সিন আছে। একবার দেখলাম মোবাইলটা রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিল, দুই সিন পরেই সেটা আবার গৌরবের হাতে কি করে এল জানি না। হয়ত দুটো ফোন ছিল। সে যাই হোক, আরিয়ান খান্না পুলিশের সাহায্য কেন নিল না সেটা পরিস্কার নয়। গৌরব ফোন করে হুমকি দেয় তবু তাকে ট্রেস করা তো দূরে থাক, কেউ ট্রেস করার চেষ্টাও করে না। 

    মোদ্দা কথা হল আপনি যদি শাহরুখের ফ্যান হন, তাহলে দেখে আসতে পারেন। প্রেমিকার হাতে হাতে রেখে পপকর্ণ খেতে খেতে খারাপ লাগবে না। আর শাহরুখ নিয়ে বেশী আদিখ্যেতা না থাকলে না গেলেও চলবে। আর দশটা হিন্দি ছবির থেকে আলাদা কিছু নয়। আমার চেন্নাই এক্সপ্রেস দেখে বেশী মজা লেগেছিল। অবশ্য এটা একান্তই ব্যক্তিগত মত। তবে একটা কথা সবিশেষ অনুরোধ, ডর বাজিগরের সাথে এক সারিতে তুলনায় আনবেন না। ওগুলো দশ হলে এটা আড়াই-ও পাবে না।

    No comments

    Post Top Ad


    Post Bottom Ad

     downloads