অস্কার বিজয়ী লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও - জিও মেরে লিও।
শাহরুখ খান অস্কার পেলেও এত খুশি হতাম না যত আনন্দ পেয়েছি এই ছেলেটা অস্কার পেয়েছে বলে। আঙুর ফল টকের মত অনেককেই বলতে শুনি অস্কার বা কোনো প্রাইজ আসল নয়, আসল হল মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া। তবে ওসব মনকে স্বান্তনা দেওয়া কথাবার্তা আজকের যুগে অচল। রাতের বেলায় কোনো মানুষ হাতে শ্যাম্পেনের বোতল নিয়ে যখন ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় এবং এই শহরটাকে দেখে আর মনে মনে ভাবে আমার যোগ্যতা কিছু কম ছিল না, ওটা আমারই পাওয়া উচিত তখন তার কতটা ফাটে সেটা একমাত্র সেই বুঝতে পারে। তার সবথেকে কাছের সঙ্গীটিও হয়ত তার হাহাকার বুঝতে পারবে না। ছেলেটা কে সেটা সকলেই জানে, বিশেষ ভনিতা করব না। লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও।
তাকে ছেলেটা কেন বলছি। লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও-কে অনেক পরে চিনেছি, এ দেশের আরো হাজারটা আম আদমীর মতই আমি তাকে প্রথমে জ্যাক নামেই চিনতাম। সেই ছেলেটা যে জুয়াতে টাইটানিকের টিকিট পেয়ে গেল এবং বড় মানুষদের সাথে এক আসনে বসে উদাত্ত কন্ঠে বলে দিল গত রাতে আমি রাস্তার ফুটপাতে একটা ব্রীজের নিচে শুয়ে ছিলাম আর এখন আমি শহরের সবথেকে ধনীদের সাথে লাঞ্চ করছি। জীবন এরকমই। বন্ধুদের সাথে স্লো মোশনে ছুটে ছুটে আসছে একটা ছেলে।
হিন্দি প্রেম কাহিনী দেখে দেখে সত্যি বলতে মাথা ধরে গেছে, ধরে যে গেছে সেটাও বুঝিনি, বুঝলাম তখন যখন পর্দায় জ্যাক এবং রোজের প্রেম কাহিনী দেখলাম। এরকম প্রেমই বোধহয় স্বর্গ থেকে তৈরী হয়ে আসে। তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। এর আগে ইংরেজী সিনেমা বলতে একটাই এবং সেটা জুরাসিক পার্ক। আর কিছু চার্লি চ্যাপ্লিনের সিনেমা। টাইটানিক যেন একটা অজানা দরজা খুলে দিল। আচ্ছা তাহলে এই হল হলিউড। এখানে এরকম হয়। ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেলাম। জানি না এটা আর কার কার ক্ষেত্রে হয়েছে, রোজের থেকেও বেশী ভালোবেসে ফেললাম জ্যাককে। সেই সময় অস্কার-এর নাম শোনা থাকলেও সেটার গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞ্যান শূন্য।
বহু পরে যখন ন্যাশানাল ইনস্টিটিউটে ভর্তী হওয়ার সময় ইন্টারভিউতে আমায় জিজ্ঞেস করা হল, একটা প্রিয় ছবির নাম বলো। আমি টাইটানিক বলেছিলাম বাই হার্ট। আর পথের পাঁচালী বলেছিলাম কারণ ওটা না বললে গুরুজনেরা খুশি হয় না। তার-ও আগে অবশ্য আমি ছেলেটার আরো কিছু সিনেমা দেখে ফেলেছি। টাইটানিকের ৪/৫ বছর পরের কথা। সেই সময় ফুটপাত থেকে কেনা ডিভিডি । একটা ক্যাসেটে ৯টা সিনেমা। বাছতে বাছতে আমার হাতে একটা ডিভিডি এসে গেল। সেখানে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর আরো কিছু সিনেমা রয়েছে। মনে পড়ে গেল টাইটানিকের সেই স্মৃতী গুলো। দু'বার না ভেবেই ডিভিডি কিনে বাড়িতে এসে পরপর দেখে নিলাম – রোমিও জুলিয়েট , ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান , দ্য বীচ।
রোমিও জুলিয়েট কাকে বলে সেটা তখনও আমার কাছে অজানা। মানে নানান লেখায় – গানে - সিনেমায় লায়লা মজনু , হীর রাঞ্জহা, সোনি - মাহিওাল ইত্যাদি যেমন শুনেছি সেরকমই রোমিও জুলিয়েট-ও শুনেছি, অঞ্জন দত্তের ‘পারব না হতে আমি রোমিও’ শুনেছি। কিন্তু শেক্সপিয়ার পড়িনি। পড়াটা কতটা জরুরী সেটার সম্পর্কেও কোনো সাম্যক ধারণা নেই (ব্রাকেটে বলে রাখি, শেক্সপিয়ার পড়ার ইচ্ছে আমার ঐ লিওনার্দোর রোমিও দেখার পরেই ইচ্ছে হয়েছিল)। রাজবাড়ির সুইমিংপুলে বুক খোলা নায়িকা কে ওরকম শিহরণ করে দেওয়া চুমু খেতে আমি আর কখনও কোথাও দেখিনি। ওরকম একটা চুমু খাওয়ার পর মরে গেলেও আফশোস থাকে না কোনো।
এর পর দেখলাম ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’। এখানে শুধু লিও কে নয়, আমি স্পীলবার্গকেও নতুন করে আবিষ্কার করলাম। স্পীলবার্গ মানেই তার মানে শুধু সায়েন্স ফিকশান বা আকাশচুম্বী দানবদের জঙ্গীপনা নয়! এর বহু পরে আমি স্পীলবার্গের ‘দ্য টার্মিনাল’ দেখে আরো অবাক হয়েছিলাম। প্রসঙ্গত হলিউডের সেরা তিনটে সিনেমার মধ্যে আমি ‘ব্যাক টু দ্য ফিউচার’-কে রাখি।
সে যাই হোক, অন্য প্রসঙ্গে যাব না। কথা হচ্ছিল সেই ছেলেটাকে নিয়ে। ২০০৭-এ যখন ব্লাড ডায়মন্ড সিনেমায় তিনি নমিনেশন পেয়েও অস্কার পেলেন না এবং কাগজে এই নিয়ে খুব লেখাটেখা হল তখন আমি প্রথম খেয়াল করলাম, টাইটানিক এগারোটা অস্কার পেয়েছিল কিন্তু তার হিরো সেই সময় নমিনেশানই পায় নি। এ কেমন কথা !! এ তো ভারতীয় টীমের রাহুল দ্রাবিড়ের মত অবস্থা। অন্যের ছায়ায় চিরকাল যে ঢাকা পরে গেল। আজ লিও-র আফটার অ্যাওয়ার্ড স্পীচটি শুনছিলাম। শুনে এতটুকু অবাক লাগে নি যে তিনি টাইটানিকের পরিচালক জেমস ক্যামরনের নাম করেননি। অভিমান সকলের হয় বস।
এরপর আমি তার ইনসেপশন দেখি। তারপর আরো কিছু সিনেমা দেখি, সবকটা নাম এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না। যেগুলো পড়ছে সেগুলি হল ‘গ্যাংস অফ নিউইয়র্ক’ , ‘অ্যাভিয়েটর’ , ‘ইলেভেনথ আওয়ার’ আরো কিছু। আজ আমি খুব খুশি। সত্যি সত্যি খুশি। জানি না কেন। কেউ একজন অস্কার পেল তাতে আমার খুশি হওয়ার কোনো কারণ থাকার কোনো কথা নয়। আসলে আমি খুশি সেই ক্লাস সেভেনে পড়া ছেলেটার কথা ভেবে, যে রাত জেগে একা একা নিজের ঘরে টাইটানিক দেখছে আর প্রতিটা সিনে শিহরিত হচ্ছে। সেই বারো বছরের ছেলেটা অমিতাভ বচ্চন দেখেছে, মিঠুন দেখেছে, অক্ষয় কুমার দেখেছে, তারা তো সকলে হিরো, তারা শেষ অবধি জিতে যাবেই। কিন্তু এই নতুন ছেলেটা তো হিরো নয়, সে একজন সাধারণ মানুষ। যে খানিক আগে রাস্তার পাশে জুয়া খেলে জিতে গেল টাইটানিকের টিকিট। তাকে একটা ঘরে মিথ্যে বদনাম দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। কোমর, বুক শেষ অবধি নাক মুখ পুরোটাই ডুবে যাচ্ছে জলে আর তাকে বাঁচাতে ছুটে আসছে শহরের সবথেকে ধনী পরিবারের সুন্দরী মেয়েটি। সেভেনে পড়া ছেলেটা ১৪ ইঞ্চি টিভিতে সিনেমা দেখছে আর ভাবছে আমার জন্যেও কেউ নিশ্চয় আসবে এইভাবে। সেই স্বপ্নের হিরো আজ অস্কার হাতে যখন মঞ্চে উঠছে আমি তখন বাসে ছিলাম। ইচ্ছে করছিল সকলকে চীৎকার করে বলি ‘জানেন টাইটানিকের সেই ছেলেটাকে মনে আছে, সে আজ তার জগতের সেরা পুরস্কারটি আজ পেল’। টাইটানিকের ১৯ বছর পর।
তাকে ছেলেটা কেন বলছি। লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও-কে অনেক পরে চিনেছি, এ দেশের আরো হাজারটা আম আদমীর মতই আমি তাকে প্রথমে জ্যাক নামেই চিনতাম। সেই ছেলেটা যে জুয়াতে টাইটানিকের টিকিট পেয়ে গেল এবং বড় মানুষদের সাথে এক আসনে বসে উদাত্ত কন্ঠে বলে দিল গত রাতে আমি রাস্তার ফুটপাতে একটা ব্রীজের নিচে শুয়ে ছিলাম আর এখন আমি শহরের সবথেকে ধনীদের সাথে লাঞ্চ করছি। জীবন এরকমই। বন্ধুদের সাথে স্লো মোশনে ছুটে ছুটে আসছে একটা ছেলে।
হিন্দি প্রেম কাহিনী দেখে দেখে সত্যি বলতে মাথা ধরে গেছে, ধরে যে গেছে সেটাও বুঝিনি, বুঝলাম তখন যখন পর্দায় জ্যাক এবং রোজের প্রেম কাহিনী দেখলাম। এরকম প্রেমই বোধহয় স্বর্গ থেকে তৈরী হয়ে আসে। তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। এর আগে ইংরেজী সিনেমা বলতে একটাই এবং সেটা জুরাসিক পার্ক। আর কিছু চার্লি চ্যাপ্লিনের সিনেমা। টাইটানিক যেন একটা অজানা দরজা খুলে দিল। আচ্ছা তাহলে এই হল হলিউড। এখানে এরকম হয়। ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেলাম। জানি না এটা আর কার কার ক্ষেত্রে হয়েছে, রোজের থেকেও বেশী ভালোবেসে ফেললাম জ্যাককে। সেই সময় অস্কার-এর নাম শোনা থাকলেও সেটার গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞ্যান শূন্য।
বহু পরে যখন ন্যাশানাল ইনস্টিটিউটে ভর্তী হওয়ার সময় ইন্টারভিউতে আমায় জিজ্ঞেস করা হল, একটা প্রিয় ছবির নাম বলো। আমি টাইটানিক বলেছিলাম বাই হার্ট। আর পথের পাঁচালী বলেছিলাম কারণ ওটা না বললে গুরুজনেরা খুশি হয় না। তার-ও আগে অবশ্য আমি ছেলেটার আরো কিছু সিনেমা দেখে ফেলেছি। টাইটানিকের ৪/৫ বছর পরের কথা। সেই সময় ফুটপাত থেকে কেনা ডিভিডি । একটা ক্যাসেটে ৯টা সিনেমা। বাছতে বাছতে আমার হাতে একটা ডিভিডি এসে গেল। সেখানে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর আরো কিছু সিনেমা রয়েছে। মনে পড়ে গেল টাইটানিকের সেই স্মৃতী গুলো। দু'বার না ভেবেই ডিভিডি কিনে বাড়িতে এসে পরপর দেখে নিলাম – রোমিও জুলিয়েট , ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান , দ্য বীচ।
রোমিও জুলিয়েট কাকে বলে সেটা তখনও আমার কাছে অজানা। মানে নানান লেখায় – গানে - সিনেমায় লায়লা মজনু , হীর রাঞ্জহা, সোনি - মাহিওাল ইত্যাদি যেমন শুনেছি সেরকমই রোমিও জুলিয়েট-ও শুনেছি, অঞ্জন দত্তের ‘পারব না হতে আমি রোমিও’ শুনেছি। কিন্তু শেক্সপিয়ার পড়িনি। পড়াটা কতটা জরুরী সেটার সম্পর্কেও কোনো সাম্যক ধারণা নেই (ব্রাকেটে বলে রাখি, শেক্সপিয়ার পড়ার ইচ্ছে আমার ঐ লিওনার্দোর রোমিও দেখার পরেই ইচ্ছে হয়েছিল)। রাজবাড়ির সুইমিংপুলে বুক খোলা নায়িকা কে ওরকম শিহরণ করে দেওয়া চুমু খেতে আমি আর কখনও কোথাও দেখিনি। ওরকম একটা চুমু খাওয়ার পর মরে গেলেও আফশোস থাকে না কোনো।
এর পর দেখলাম ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’। এখানে শুধু লিও কে নয়, আমি স্পীলবার্গকেও নতুন করে আবিষ্কার করলাম। স্পীলবার্গ মানেই তার মানে শুধু সায়েন্স ফিকশান বা আকাশচুম্বী দানবদের জঙ্গীপনা নয়! এর বহু পরে আমি স্পীলবার্গের ‘দ্য টার্মিনাল’ দেখে আরো অবাক হয়েছিলাম। প্রসঙ্গত হলিউডের সেরা তিনটে সিনেমার মধ্যে আমি ‘ব্যাক টু দ্য ফিউচার’-কে রাখি।
সে যাই হোক, অন্য প্রসঙ্গে যাব না। কথা হচ্ছিল সেই ছেলেটাকে নিয়ে। ২০০৭-এ যখন ব্লাড ডায়মন্ড সিনেমায় তিনি নমিনেশন পেয়েও অস্কার পেলেন না এবং কাগজে এই নিয়ে খুব লেখাটেখা হল তখন আমি প্রথম খেয়াল করলাম, টাইটানিক এগারোটা অস্কার পেয়েছিল কিন্তু তার হিরো সেই সময় নমিনেশানই পায় নি। এ কেমন কথা !! এ তো ভারতীয় টীমের রাহুল দ্রাবিড়ের মত অবস্থা। অন্যের ছায়ায় চিরকাল যে ঢাকা পরে গেল। আজ লিও-র আফটার অ্যাওয়ার্ড স্পীচটি শুনছিলাম। শুনে এতটুকু অবাক লাগে নি যে তিনি টাইটানিকের পরিচালক জেমস ক্যামরনের নাম করেননি। অভিমান সকলের হয় বস।
এরপর আমি তার ইনসেপশন দেখি। তারপর আরো কিছু সিনেমা দেখি, সবকটা নাম এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না। যেগুলো পড়ছে সেগুলি হল ‘গ্যাংস অফ নিউইয়র্ক’ , ‘অ্যাভিয়েটর’ , ‘ইলেভেনথ আওয়ার’ আরো কিছু। আজ আমি খুব খুশি। সত্যি সত্যি খুশি। জানি না কেন। কেউ একজন অস্কার পেল তাতে আমার খুশি হওয়ার কোনো কারণ থাকার কোনো কথা নয়। আসলে আমি খুশি সেই ক্লাস সেভেনে পড়া ছেলেটার কথা ভেবে, যে রাত জেগে একা একা নিজের ঘরে টাইটানিক দেখছে আর প্রতিটা সিনে শিহরিত হচ্ছে। সেই বারো বছরের ছেলেটা অমিতাভ বচ্চন দেখেছে, মিঠুন দেখেছে, অক্ষয় কুমার দেখেছে, তারা তো সকলে হিরো, তারা শেষ অবধি জিতে যাবেই। কিন্তু এই নতুন ছেলেটা তো হিরো নয়, সে একজন সাধারণ মানুষ। যে খানিক আগে রাস্তার পাশে জুয়া খেলে জিতে গেল টাইটানিকের টিকিট। তাকে একটা ঘরে মিথ্যে বদনাম দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। কোমর, বুক শেষ অবধি নাক মুখ পুরোটাই ডুবে যাচ্ছে জলে আর তাকে বাঁচাতে ছুটে আসছে শহরের সবথেকে ধনী পরিবারের সুন্দরী মেয়েটি। সেভেনে পড়া ছেলেটা ১৪ ইঞ্চি টিভিতে সিনেমা দেখছে আর ভাবছে আমার জন্যেও কেউ নিশ্চয় আসবে এইভাবে। সেই স্বপ্নের হিরো আজ অস্কার হাতে যখন মঞ্চে উঠছে আমি তখন বাসে ছিলাম। ইচ্ছে করছিল সকলকে চীৎকার করে বলি ‘জানেন টাইটানিকের সেই ছেলেটাকে মনে আছে, সে আজ তার জগতের সেরা পুরস্কারটি আজ পেল’। টাইটানিকের ১৯ বছর পর।
টাইটানিকের আমার একটি প্রিয় দৃশ্য যেখানে জ্যাক তার জীবন দর্শন বলছে :
No comments
Post a Comment