Header Ads

ad728
  • Breaking News

    সুজয়দার নতুন বউ


    অফিস ফেরার পথে হঠাৎ সেদিন মলয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল সুজয়দার। মলয় সুজয়দার শ্যালক। সুজয়দার বিয়ে হয়েছে সবে মাত্র সপ্তাহ খানেক হবে। দেখা হতেই মলয় বলল, ‘কি গো, এর মধ্যেই আবার অফিস শুরু করে দিলে ?’ সুজয় একটু হেসে বলল, ‘কি আর করব বল, প্রাইভেট চাকরী, নিজের বিয়েতেই ছুটি দিচ্ছিল না, অনেক কষ্টে সাতদিন ছুটি ম্যানেজ করা গেছিল। আজ থেকেই আবার জয়েন করলাম। তা তুমি এদিকে!!’।
    - এদিকে আমার এক বন্ধু থাকে, তার সাথে একটু দরকার ছিল।
    - বাড়ির সকলে ভালো আছে?
    - হ্যাঁ, একই রকম। দিদি কেমন আছে?
    - দিব্যি আছে।
    - তা তো থাকবারই কথা। বিয়ের পর থেকে তো আমাদের একেবারেই ভুলে গেছে।
    এই কথা শুনে সুজয়দা একটু থমকালো। নিজেকে ধাতস্থ করে চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে সে বলল, ‘কেন এই তো সেদিন দেখলাম বাড়িতে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিল’।
    - না না। কবে ? কাল রাতেও তো মা আমাকে বলল, তিন-চারদিন হয়ে গেল বুল্টি ফোন করল না।

    বুল্টি সুজয়দার বউয়ের ডাক নাম। ভালো নাম রুমি। রুমি নামটিও খুব ছোট। এবং ডাকার পক্ষে বুল্টির থেকেও সহজ। তবু ঐ আরকি!! বাঙালির ডাক নাম থাকতেই হবে সেই হিসেবেই রুমির ডাকনাম বুল্টি। সুজয়দা রুমিকে রুমি বলেই ডাকে। সেই রুমি এখন দোতলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। গতকাল সুজয়দা জিজ্ঞেস করেছিল, কার সাথে কথা হল। রুমি বলেছিল, মায়ের সাথে।


    এর আগেও অনেকবার সুজয়দা জিজ্ঞেস করেছে। হয় মা নয় ভাই বা বাবা বলে কাটিয়ে দিয়েছে। আজ যখন মলয় বলল, দিদি বাড়িতে ফোন করে না তখন সুজয়দা বুঝতে পারে যে রুমি তাকে মিথ্যে কথা বলেছে। কিন্তু কেন? 

    রুমির ফোন হয়ে গেছে। রুমি ঘরে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা ঠিক করছে। ঘরের হালকা আলোতে রুমিকে অপরূপ দেখাচ্ছে। সুজয়ের বিশ্বাস করতে মন চাইছে না যে রুমি অন্য কারো সাথে প্রেম করে। বিয়ে হয়েছে সাত দিন হবে কিন্তু আলাপ তো প্রায় সাত মাসের বেশি। দেখা শোনা হয়েছিল সেই শ্রাবণে। তারপর থেকে নিয়মিত আলাপ ছিল। বিয়ের আগে এক সাথে নিজেদের মধ্যে বহুবার দেখাও হয়েছে। একসাথে সিনেমা দেখা, বেড়াতে যাওয়া। পুজোতে ঠাকুর দেখতে গেছিল একসাথে। নবমীতে ছাদে রুমিকে চুমু খেয়েছিল সুজয়দা। কিছু সময় পর রুমি সরিয়ে দিয়ে বলেছিল, বাকিটা বিয়ের পর। 

    সেই রুমিকে খারাপ ভাবতে কষ্ট হচ্ছিল সুজয়দার। কিন্তু ব্যাপারটা না জানলে নিজে শান্তি পাচ্ছিল না। তাই হালকা চালে রুমিকে জিজ্ঞেস করল, বাড়িতে ফোন করলে ?
    - হ্যাঁ। মায়ের সাথে একটু কথা বললাম।
    - কি বলল মা ?
    - সেরকম কিছু না। টুকটাক। কেমন আছি, কি করছি এইসব।
    - তুমি কি বললে ?
    - কি আর বলব! বললাম ভালোই আছি। আর কি !!
    - সত্যি সত্যি ভালো আছ তো?
    - এরকম ভাবে বলছ কেন?
    - না, ভালো না থাকলে আমায় জানিও। তোমায় ভালো রাখার ব্যবস্থা তো আমাকেই করতে হবে।
    - আমি খুব ভালো আছি। তোমাকে আর আমায় নিয়ে বেশি ভাবতে হবে না।
    - বিকেলে মলয়ের সাথে দেখা হয়েছিল। তুমি সময় পেলে একটু তোমার মা-কে ফোন করে নিও। তোমার বাড়ির লোক তোমার চিন্তা করছিল।
    - আমি তো বাড়িতেই ফোন করেছিলাম।
    - মলয় বলল, তুমি তিন-চার দিন বাড়িতে ফোন করোনি। তোমার মা চিন্তা করছিল। মনে হল, তোমাকে বলি তাই বললমা। এরপর - বাকিটা তুমি জান আর তোমার মা জানে।
    - তুমি কি বলতে চাইছ আমি অন্য কোথাও ফোন করি?
    - আমি সেকথা জিজ্ঞেস করিনি। তুমি সেটা মলয়কে ফোন করে জিজ্ঞেস করে নাও।
    - না, তুমি কি বলতে চাইছ? আমি মিথ্যে কথা বলে অন্য কোথাও ফোন করি। তাই তো।
    - আমি কিছুই বলতে চাইছি না। আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাবো।
    - না আমি তোমাকে ঘুমাতে দেব না। আগে ব্যাপারটা পরিস্কার হোক।
    - কিচ্ছু পরিস্কারের দরকার নেই। তুমি স্বাধীন। আজকের যুগের নারী। তোমাদের সব কিছু করার স্বাধীনতা রয়েছে। তোমরা বিয়ের পরেও এর তার সাথে প্রেম করবে এবং সেটাকে মাই চয়েস বলে কেতা দেখাবে। সে যা খুশি দেখাও। আমার তাতে কিছু যায় আসে না। শুধু একটাই অনুরোধ, আমার চোখের সামনে প্রেম পীড়িত বেশী দেখাবে না। আর যদি মনে হয় ভুল করেছ, ডিভোর্স চাই, তো আমায় জানিও আমি খুব খুশি খুশি সেটা দিয়ে দেব। এবার আমি পাশ ফিরে শুলাম। আমায় ডিসটার্ব কর না।

    সকালে সুজয়দা দেখল রুমি বাড়িতে নেই। শুধু একটা চিরকুট রেখে গেছে। ‘আমি বাড়িতে ফোন করিনি এটা ঠিক, কিন্তু তার মানে এটা নয় যে আমি অন্য কারো সাথে প্রেম করি বা অন্য কোথাও আমার সম্পর্ক আছে। যে এত সহজে আমায় সন্দেহ করে তার সাথে আমি সারা জীবন কিভাবে থাকব। আমি চললাম। টেবিলে ব্রেকফাস্ট সাজানো আছে। ফ্রীজে খাবার আছে। তোমার জন্যে আমার তৈরী শেষ খাবার’।


    চিঠি পড়ে সুজদার খারাপ লাগছিল। হতে পারে রুমি মিথ্যে কথা বলছিল। কিন্তু সে যে অন্য কারো সাথে প্রেম করে সেটার কোনো প্রমাণ নেই। শুধু শুধু তাকে মিথ্যে বদনাম দেওয়া ঠিক হয় নি। পরিস্কার ভাবে জিজ্ঞেস করলেই হত। রাগের মাথায় একটু বেশি বেশি বলে ফেলেছে। কিন্তু রুমি নিজে থেকেই তো ঘটনা খুলে বলতে পারত। সুজয়দা না হয় শুনতে চায় নি, কিন্তু তার নিজে থেকে বললে কি অসুবিধা ছিল। এবার অফিস কামাই করে বউয়ের রাগ ভাঙাতে ছুটতে হবে। কি বিপদ। সুজয়দা রুমিকে ফোন করল। ফোন ব্যস্ত।

    কার সাথে এত ফোনে কথা বলে রুমি, যেটা আর কেউ জানে না। না সুজয়দা খুব একটা দোষ করে নি। যারা মিথ্যে কথা বলে তাদের সাথে আশেপাশের লোকজনের ভুল বোঝাবুঝি হবেই। অন্য লোককে দোষ দেওয়ার আগে নিজেকে শোধরানো দরকার। লুকিয়ে করা সকল কাজই খারাপ কাজ। যদি ভালো কাজই সে করবে তাহলে লুকিয়ে করবে কেন ?

    এমন সময় দরজায় বেল বাজল। পিওন। রুমিকে খুঁজছে। কি দরকার। রুমি চৌধুরী আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ইতিহাসে এম এ পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এটা ওনার সার্টিফিকেট।
    - আপনাদের কি প্রতিষ্ঠান?
    - আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম অল ইন্ডিয়া অনলাইন এডুকেশান। আমরা টেলিফোনের মাধ্যমে ক্লাস এবং পরীক্ষা নিয়ে থাকি। যারা নানা কারণে মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেয় তাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে আমরা এই প্রতিষ্ঠান চালু করেছি। এটা অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রির সমতুল্য। ...

    পিওনটি আরো কথা বলে যাচ্ছিল কিন্তু সুজয়দার কানে কিছুই ঢুকছিল না। ইসস বড্ড ভুল হয়ে গেছে। কোনো মতে স্নান সেরে জামাটা জুতোটা গলিয়ে সুজয়দা শ্বশুড়বাড়ি দিকে ছুটল। যেভাবেই হোক রুমির কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে।

    No comments

    Post Top Ad


    Post Bottom Ad

     downloads