তারপর গামছা পরে বেরিয়ে এলেন শ্রীজাত।
ঘটনাটা ২০০৯-এর গরমকালে। সম্ভবত মে-জুন মাস। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০০৮-এর ডিসেম্বরে উনিশ-কুড়িতে আমার একটা গল্প বেরিয়েছে আর আমি চারিদিকে ভীষণ কেত মেরে ঘুরছি। যেখানে যাচ্ছি হাতে করে বইটি নিতে ভুলছি না। সুযোগ পেলেই লোকজনকে দেখাচ্ছি। বাসে ট্রেনে নিজেই নিজের লেখা বারবার পড়ছি। সবাই যেমন করে আরকি !! চাকরীর জন্যে বায়োডাটাতেও 'আমার লেখা উনিশ-কুড়ি ছেপেছে' লিখতে ভুলছি না।
একদিন কোনো এক বন্ধুর মুখে শুনে চলে গেলাম টেকনিশিয়ান স্টুডিও। সেখানে প্রয়াত পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর ছেলে তার নতুন সিনেমা পত্রিকার জন্যে কিছু রিপোর্টার নিচ্ছেন। ইন্টারভিউ নেবেন। সেজেগুজে পৌঁছে গেলাম। হল না কিছুই। জীবনপঞ্জী জমা দিয়ে টাটা। সেখানে এক লোকের সাথে আলাপ হল, নামটা সঠিক মনে নেই, সম্ভবত রঞ্জিত। মুখটাও মনে নেই, সামনে এলে চিনতে পারব না। বোঝা গেল তিনি পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ।
একদিন কোনো এক বন্ধুর মুখে শুনে চলে গেলাম টেকনিশিয়ান স্টুডিও। সেখানে প্রয়াত পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর ছেলে তার নতুন সিনেমা পত্রিকার জন্যে কিছু রিপোর্টার নিচ্ছেন। ইন্টারভিউ নেবেন। সেজেগুজে পৌঁছে গেলাম। হল না কিছুই। জীবনপঞ্জী জমা দিয়ে টাটা। সেখানে এক লোকের সাথে আলাপ হল, নামটা সঠিক মনে নেই, সম্ভবত রঞ্জিত। মুখটাও মনে নেই, সামনে এলে চিনতে পারব না। বোঝা গেল তিনি পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ।
দু-দিন পর তাদের বেহালার এক অফিসের ঠিকানায় ডাক এল। যতদুর মনে পড়ছে সেটা অঞ্জন চৌধুরীর পুরোনো বাড়ি। জীবনে প্রথমবার বেহালা যাচ্ছি। সেই সময় বেহালা একটা হেব্বী জায়গা ছিল, মানে দাদা-র বাড়ি সেখানে। সেসময় দাদা ফুলদমে খেলার সাথে যুক্ত। অতিকষ্টে ঠিকানা মিলিয়ে সেই অফিসে পৌঁছলাম। আমার ইন্টারভিঊ নেওয়া হল, নিলেন সেই রঞ্জিত বাবুই। সবশেষে তিনি বললেন আজ থেকেই কাজে লেগে যাতে পারবে ? আমিও অতি উৎসাহে জি হা বলে দিলাম।
- শ্রীজাতকে চেন ?
সত্যি কথা বলতে চিনি মানে নামটা জানি শুধু। উনিশ-কুড়িতে কবিতা লেখে। কি লেখে সেটা সঠিক বুঝি না। খুব একটা পাত্তাও দিতাম না। সে সময় উনিশ-কুড়িতে আমার পছন্দের লেখক ছিল স্মরণজিৎ চক্রবর্তী। মূলত ওর লেখার জন্যেই কিনতাম। যেদিন থেকে স্মরণজিৎ দেশে লেখা শুরু করল, স্মরণজিৎ-এর লেখার কোয়ালিটি পড়ে গেল বলে আমার ধারণা।
সত্যি কথা বলতে চিনি মানে নামটা জানি শুধু। উনিশ-কুড়িতে কবিতা লেখে। কি লেখে সেটা সঠিক বুঝি না। খুব একটা পাত্তাও দিতাম না। সে সময় উনিশ-কুড়িতে আমার পছন্দের লেখক ছিল স্মরণজিৎ চক্রবর্তী। মূলত ওর লেখার জন্যেই কিনতাম। যেদিন থেকে স্মরণজিৎ দেশে লেখা শুরু করল, স্মরণজিৎ-এর লেখার কোয়ালিটি পড়ে গেল বলে আমার ধারণা।
যাই হোক, আমার কাজ হল, এই মুহুর্তে শ্রীজাত-র বাড়ি যেতে হবে এবং তার থেকে একটি কবিতা নিয়ে আসতে হবে। তিনি ফোনে সব অ্যারেঞ্জ করে দিলেন। আমার পকেটে ৫০ টাকা মত ছিল। শ্রীজাত-র বাড়ি ঠিক কোথায় আমি জানি না। মানে সেইদিন আমায় কোথায় পাঠানো হয়েছিল আজ আর মনে পড়ে না। সম্ভবত গড়িয়া। স্বাভাবিক ভাবেই বাসে করে যেতে হয়েছিল। প্রচন্ড গরম। চক্ষু লজ্জায় বাসভাড়াটা চাওয়া হয় নি।
একটা অল্প হলেও রোমাঞ্চ ছিল - শ্রীজাত-র বাড়ি যাচ্ছি। সেই সময়েও কিন্তু শ্রীজাত 'শ্রীজাত' হয় নি। যদিও তার কবিতা দেশ-এ প্রকাশিত, পাঁচ বছর আগেই আনন্দ পুরস্কারে ভুষিত, হয়ত গোটা ৫/৬ কাব্যগ্রন্থ বার হয়ে গেছে। কবি মহলে যথেষ্ট পরিচিত। তবু তার রেঞ্জ এখনকার মত অত বিস্তৃত হয় নি সেই সময়। তবুও তার সঙ্গে দেখা হবে, একটা কেমন কেমন ভাব।
একটা অল্প হলেও রোমাঞ্চ ছিল - শ্রীজাত-র বাড়ি যাচ্ছি। সেই সময়েও কিন্তু শ্রীজাত 'শ্রীজাত' হয় নি। যদিও তার কবিতা দেশ-এ প্রকাশিত, পাঁচ বছর আগেই আনন্দ পুরস্কারে ভুষিত, হয়ত গোটা ৫/৬ কাব্যগ্রন্থ বার হয়ে গেছে। কবি মহলে যথেষ্ট পরিচিত। তবু তার রেঞ্জ এখনকার মত অত বিস্তৃত হয় নি সেই সময়। তবুও তার সঙ্গে দেখা হবে, একটা কেমন কেমন ভাব।
যতদুর মনে পড়ে গড়িয়ার একটা ফ্লাই-ওভার-এর নীচে একটা খাল মত রাস্তার পাশ দিয়ে কিছুটা গিয়ে শ্রীজাত-র বাড়িতে উঠেছিলাম। একজন ভদ্রমহিলা সম্ভবত শ্রীজাত-র মা এসে বললেন, বোসো, ও বাথরুমে আছে। আমি বাইরের সোফায় বসলাম। সাধারণ ঘর। তবে আমাদের থেকে ৩/৪ গুণ ধনী হবে। দেওয়ালে ছবি, জানলায় মোটা কাপরের পর্দা এসব আমাদের ঘরে নেই।
খানিক পরে গামছা অথবা সাদা তোয়ালে সঠিক মনে নেই এবং খালি গায়ে ৩০ / ৩৫ বছরের একটি ছেলে, মাথায় হালকা টাক, বেরিয়ে এল। শ্রীজাতকে এই প্রথম দেখলাম। বয়স যে অল্প সেটা আগে থেকেই আন্দাজ ছিল। দেখে কিছুটা নিরাশ হলাম কি না এখন আর খেয়াল নেই। তবে এটা মনে আছে, আমার মনে হয়েছিল এর সাথে আর আমার পাড়ার আশিষ-দার সাথে কোনো পার্থক্য নেই। এটাকে শ্রীজাত প্রশংসা হিসেবে নেবে না মনে মনে গোসা করবে আমি জানি না।
বেশী কিছু কথা হয় নি। হবেই বা কেন! সে আমার বন্ধু নাকি আমি খুব বড় পন্ডিত?? সামান্য একজন বাহক মাত্র। একটা ভাঁজ করা কাগজে ১৪ / ১৫ লাইনের একটা কবিতা নিয়ে আমায় বিদায় হতে হল। বাইরে এসে বাসে উঠে কবিতাটা পড়লাম। অতি অখাদ্য। এর থেকে ভালো কবিতা তো আমি লিখি। হঠাৎ আমার প্রবল আত্মসম্মান চাগাড় দিয়ে উঠল। আরে একি করছি আমি!! আমি তো রিপোর্টারের ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম, আমাকে দিয়ে পিওনের কাজ করাচ্ছেন রঞ্জিত বাবু। কোনো মতে লেখাটা ওনাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে আমি সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। গাড়ি ভাড়া বাবদ ২০টাকা চাইতে আর মন লাগে নি।
বেশ কিছুদিন পর রঞ্জিত লোকটার সাথে অ্যাকাডেমীর সামনে দেখা হয়েছিল। আরো দু-একজন-এর সাথে আড্ডা মারছিল। জিজ্ঞেস করলাম, দাদা আপনাদের পত্রিকা কেমন চলছে? বলল, কোথায়, এখনও প্রকাশই পেল না। ও প্লান বন্ধ হয়ে গেছে। আমি উত্তর দিলাম - রিপোর্টারদের দিয়ে পিওনের কাজ করালে যে কোনো পত্রিকাই দুদিনে বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত। সেই সময় আমি তখনও সিগারেট খাওয়া শুরু করিনি। শুরু করলে ওনার মুখের সামনে খানিক ধোঁওয়া উড়িয়ে দিতাম।
No comments
Post a Comment