Header Ads

ad728
  • Breaking News

    আত্মহত্যা করার সেরা উপায়?


    শুনেছি ইন্টারনেটে সবকিছু পাওয়া যায়। গুগলে গিয়ে তাই আত্মহত্যার কিছু উপায় খুঁজতে গেলাম, হাতে এল কোলবালিশ। কোথাও এই নিয়ে কেউ কিছু লিখে রেখে যায় নি। সুতরাং মনে হল, মগের মুলুকে অবশ্যই আত্মহত্যা বিষয়ক কিছু লেখা থাকা উচিত। অন্তত পক্ষে ভবিষ্যতে যারা আত্মহত্যা করতে চায় তাদের উপকারের জন্য কিছু করতে মন চাইল। তাই অনেক ভেবে আত্মহত্যার কিছু সহজ পদ্ধতি নিয়ে আপনাদের কিছু জ্ঞান দেব। জানি স্কুলের পরীক্ষায় শুধু হেডিং পড়েই কাজ চালিয়ে নিয়েছেন কিন্তু জীবনের পরীক্ষায় শুধু হেডিং পড়ে পাশ করা যায় না। তাই অনুরোধ পড়লে পুরোটাই পড়ুন নইলে নিজের মরার জন্যে সঠিক উপায় বাছবেন কিভাবে? মনে রাখবেন জন্ম নেওয়াটা আমাদের নিজের হাতে ছিল না কিন্তু কে কি করে মরবে সেটা কিন্তু আমরা ইচ্ছে করলেই ঠিক করতে পারি।
    প্রথমেই বলে রাখা ভাল, এটা আর যাই হোক, কোনো এক্সপার্ট রিভিউ নয়। আত্মহত্যা নিয়ে এক্সপার্ট রিভিউ লেখা কারো পক্ষেই বোধহয় সম্ভব নয়। কারণ বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হলে আপনাকে আগে আত্মহত্যা করে মরতে হবে আর একবার মরে গেলে আপনি লিখবেন কিভাবে ? তাই এটা একটা ধারণা এবং আশেপাশের নানান আত্মহত্যা ঘটনার পর্যবেক্ষণের ফসল।

    সবথেকে সহজ এবং সেরা পদ্ধতি হল বিষ খাওয়া

    । বাস্তব জীবনে যত আত্মহত্যার কথা শুনেছি সেগুলির বেশির ভাগই হল বিষ খেয়ে। বিষ খেয়ে মরার মধ্যে একটা রয়্যাল ব্যাপার স্যাপার আছে। দেশে বিদেশের বহু রাজা রাণী, বহু নবাব বেগমেরা বিষ খেয়ে মরাই পছন্দ করতেন। শেক্সপিয়ার থেকে রবীন্দ্রনাথ এরা সকলেই তাদের প্রিয় নায়িকাকে নিজ হাতে বিষ তুলে দিয়েছেন। ‘বিষ পান’ নিয়ে বহু গান-কবিতা ইত্যাদি আছে। তবে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার পজিটিভ রেজাল্ট শতকরা পঞ্চাশ ভাগ। বহু লোক বিষ খেয়েও বেঁচে গেছে এবং সারা জীবন তাকে এর জন্য বহু ল্যাঁদ খেতে হয়েছে। এমনকি যে বউ সেসময় বলেছিল , ‘ওগো কেন তুমি এরকমটা করলে, আমরা কি দোষ করেছি’, সেই বউই পরে বলবে, ‘শালা হারামীটা সে সময় মরে গেলেই পারত’। যে মা সে সময় বলেছিল, খোকা, এ তুই কি করলি, তোর দুঃখ একবার আমাকে বলতে পারলি না’। সেই মা পরে বলবে, ‘যে ছেলে বিষ হজম করে নেয় সে একদিন গোটা পরিবারকে খেয়ে নেবে।’ আর এখনকার দিনে বিষে বিশ্বাস করা ঠিক নয়। সবেতেই ভেজাল। এমনিতেই কথা আছে বাঙালী ফ্রীতে পেলে বিষও খেয়ে নেবে। তাই বিষ খেয়ে মরাতে কোনো প্রেস্টিজ নেই। স্বাভাবিক সহজ জিনিসের দাম কি করেই বা বেশী হবে। লোকজন সামনে আহা উহু করবে ঠিকই কিন্তু মনে মনে টিটকিরি দেবে।

    আমাদের বিচারে দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হল গলায় দড়ি

    । এটা নরম্যালি গ্রামের দিকে বেশী চালু, চাষাভুষোদের ব্যাপার। তাদের বাড়িতে ফিনাইল – অ্যাসিড ইত্যাদির থেকে ছাগল বাঁধা বা মাছ ধরার জাল বানানোর দড়ি সহজলভ্য তাই তারা দড়ি দিয়েই নিজের ভবলীলা সাঙ্গ করতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ঝুলে পড়ার জন্যও শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে সুবিধা বেশী। বড়বড় বট অশ্বত্থ গাছে লটকে যাবেন আর মরার পর ভুত হয়ে সেখানেই গেড়ে যাবেন। ট্রাভেলিং কস্ট এবং কষ্ট অনেক কমে যাবে। আর শহরের সিলিং ফ্যানে কোনো এক ভুত কালে টপকানো গেলেও এখন সেকথা ভুলেও ভাববেন না। ফ্যানসুদ্ধ আপনি যখন হুড়মুড়িয়ে বিছানায় পড়বেন তখন ফ্যান এবং বিছানা দুটোরই দফারফা। আর দুটোকে ঠিক না করিয়ে আপনার গিন্নী আপনাকে মরতে দেবেন ভেবেছেন ?? আর সেরকম ফ্যানের মিস্ত্রী কবলে যদি আপনি পড়েন তাহলে আত্মহত্যার কথা তো ভুলেই যান, দু-তিন মাস পর হয়ত সেই মিস্ত্রীকে খুনের দায়ে আপনার যাবজ্জীবন হবে।
    তৃতীয় যে পদ্ধতিটি এবার বলব সেটা একটু খতরনাক। গায়ে আগুন। এটা সকলের কম্য নয়। প্রচন্ড রগচটা মানুষের পক্ষেই হয়ত এটা করা সম্ভব। তবে এই পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করা গেলেও লোকজন এটাকে খুন বলেই বেশি ভাবতে পছন্দ করে। অর্থাৎ আপনি তো নিজেই নিজের গায়ে অগ্নি সংযোগ করে দুনিয়া থেকে বিয়োগ হলেন কিন্তু তারপর আপনার বাড়ির লোকজন, আপনার শ্বশুরবাড়ি, মাসতুতো ভাইয়ের ননদের বড় ঠাকুরপোর বেয়াই বাড়ি অবধি ঝামেলায় পড়ে যাবে। তাদের আগামী পাঁচ সাত বছর থানা উকিল করে করেই কেটে যাবে। আর উঠতে বসতে খেতে হাগতে সকলে মিলে আপনাকেই গালাগালি দেবে। এমনকি আপনার কল লিস্ট ঘেঁটে দেখার পর লোন কোম্পানীর যে মেয়েটি আপনাকে লোন নেওয়ার জন্যে অফার দিয়েছিল তার সাথে একটা পরকীয়ার গল্প ফেঁদে সন্ধ্যেবেলায় মুখরোচক টক শো শুরু হয়ে যাবে। সেখানে নেতা নেত্রী অভিনেত্রী সমাজ সংস্কারক, মনোবিদ তিলোত্তমা দেবী সকলেই সেজে গুঁজে হাজির হবে। তিনদিন খবরের পাতায় আপনিই থাকবেন শিরোনামে। তাই মরার পর সকলের মনে বহুদিন স্থায়ীত্ব পেতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। তবে মরার আগে ভালো দেশলাই-এর ব্যবস্থা অবশ্যই রাখবেন। মোটা মাথাওয়ালা শক্ত কাঠির বদলে চিমসে খ্যাংড়া কাঠি নিলে দেশলাই আপনার জ্বলবে না। তখন মাথা এমন গরম হবে যে মনে হবে গোটা দুনিয়াটাই জ্বালিয়ে দিই।
    চার নম্বর উপায় হল হাতের শিরা কেটে। শিরা কাটা মানে কিন্তু সত্যি সত্যি শিরা কাটা। মানে কচি প্রেমিকের মত ব্লেড দিয়ে ‘তু হে মেরি কিরণ’ লেখার মত নয়। একেবারে ভারত পাকিস্তান সীমানায় যেরকম লকিড় কাটা আছে সেই রকম। টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে, দূরে টেবিলে রবীন্দ্রসঙ্গীত বা শাস্ত্রীয়সঙ্গীত বাজছে। ঠোঁটের কোণায় জ্বলন্ত সিগারেট। হাতে চকচকে ছুঁড়ি। উফ ফাটাফাটি একেবারে সঞ্জয় লীলা বনশালির সিনেমা। এক কোঁপেই কুপোকাত। গলগল করে রক্ত পড়বে। গড়িয়ে বেরিয়ে যাবে দরজার ফাঁক দিয়ে। কেউ একজন দেখে প্রবল আর্তনাদ করে চিৎপটাং। হাত কেটে গেলেই যে মরে যাবে সেরকমটা বোধহয় হবে না। এরপরেও খানিকক্ষন আপনাকে পৃথিবীর সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। এইটাই হল সবথেকে কঠিন সময়। আজ তোমার পরীক্ষা। এই সামান্য সময়টুকু ধৈর্য্য ধরে থাকতে হবে। হঠাৎ করে ‘দাদা আমি বাঁচতে চাই’ করলে চলবি নি। মরছেনই যখন মাথা উঁচু করে মরুন। প্যানপ্যান করে মরতে আপনার ভালো লাগবে?
    পাঁচ নম্বর - মেট্রোয় ঝাঁপ। আমাদের বিচারে এটা সবথেকে কঠিন। কারণ শুধু মরব ভাবলেই হবে না, আপনাকে রীতিমত চোর-পুলিশ খেলায় ওস্তাদ হতে হবে। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে মরার এলেমই আলাদা। আমাদের ধারণা এই ভাবে মরলে মৃত্যুর ওপারে আপনাকে কোনো ‘মরে আমি কি পেলাম’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফ থেকে বীরচক্র প্রদান করাও হতে পারে। মেট্রোয় মরাটা কেরকম আসুন একটু ভেবে দেখি। ধরুন আপনার মাথায় এল আপনি মরবেন। এবার আপনাকে ভালো পোশাক আশাক পরে ঘর থেকে বেরোতে হবে। ছেঁড়া গেঞ্জী পরে মেট্রোয় ঢুকলে সকলের নজর গিয়ে তো আপনার উপরেই প্রথম পড়বে। তাই সকলের ভীড়ে মিশে থাকতে হলে আপনাকে ফিটফাট থাকতে হবে। পারলে ঘাড়ে বগলে হালকা ডিও দিয়ে নিতে ভুলবেন না। এবার টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে আপনাকে টিকিট কাটতে হবে এবং সামনে লোকের বিশাল ব্যাগে ধাক্কা খাওয়া স্বত্তেও তাকে কিছু বলতে পারবেন না। কারণ মৃত্যুর সময় সকলকেই আপনি মাফ করে যেতে চাইবেন। এবার মেট্রোর জন্যে দাঁড়ালেন। কপাল ভালো থাকলে সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাবেন। অথবা আপনাকে কুড়িমিনিট অবধি অপেক্ষা করতে হতে পারে। রেক খারাপ। এসি খারাপ। যান্ত্রিক গোলোযোগ নানা রকম কারণে। এমনকি হয়ত আপনার আগেই কেউ একজন মেট্রোয় সুইসাইড করেছে সেই কারণে বডি সরাতে এক ঘন্টা পর্যন্ত আপনাকে ওয়েট করতে হতে পারে। এরপর আশেপাশে আপনার কানে আসবে দুনিয়াসুদ্ধ সকল পাবলিক, ছেলে থেকে বুড়ো, মেয়ে থেকে মাসি সকলেই সেই লোকটাকে প্রবল গালি দিচ্ছে যে মেট্রোয় সুইসাইড করল। ধরে নিলাম আপনার যদি চক্ষুলজ্জা নেই এবং আপনি ভীষণ কানকাটা। একঘন্টা অপেক্ষা করার পর আপনি পরবর্তী মেট্রোয় আত্মহত্যা করলেন। তাহলে আপনাকে বীরচক্র প্রদান করার থেকে কে আটকাবে। তবে খেয়াল রাখবেন যদি আত্মহত্যা করতে গিয়ে ফেল করেন তাহলে আপনার জরিমানা এবং জেল হবে। আর অফিসটাইমের পাবলিকের হাতে পড়লে কি হবে সেটা উহ্য থাক।
    এসব ছাড়াও লাইনে গলা, ছাদ থেকে লাফ, মাথায় গুলি, জলে ডোবা ইত্যাদি নানা রকম আত্মহত্যার উপায় আছে বইকি। আপনার যেটা ভালোলাগে সেটাই অ্যাপ্লাই করুন। আপনার আত্মহত্যার কারণ যাই হোক না কেন ফলাফল যেন ১০০ শতাংশ সঠিক হয় তার জন্যে দয়া করে সঠিক পরিকল্পনা করে নেবেন। যেকোনো কাজের আগেই পেপার ওয়ার্ক করাটা খুবই জরুরী। তাই আত্মহত্যা করার আগে এই প্রতিবেদনট অবশ্যই পড়বেন এবং ভবিষ্যতে যারা আত্মহত্যার পথে যেতে চাইছেন তাদেরকেও উৎসাহ দেওয়ার জন্যে অবশ্যই ফেসবুকে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এই লেখায় কোনো কিছু মিস হয়ে গেলে অনুগ্রহ করে নিচের কমেন্ট বক্সে সেটা উল্লেখ করতে পারেন।
    বিঃদ্রঃ পুরো লেখাটাই মজা করে লেখা। এটা পড়ে কেউ আবার টুপ করে সুইসাইড করে ফেললে দয়া করে আমাদের ব্লেম দেবেন না যেন। মনে রাখবেন লেখাটা আমাদের হলেও ব্রেনটা আপনার, ওটাকে নিজেই ওয়াশ করুন।

    No comments

    Post Top Ad


    Post Bottom Ad

     downloads